চুলের যত্নে টিপস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা সকলেই চাই আমাদের চুল হয়ে উঠুক ঝলমলে, রেশমি ও আকর্ষনীয়। কিন্তু সবার স্কাল্প এক না।
প্রত্যাকের স্কাল্পের ধরণ আলাদা আলাদা। স্কাল্পের ধরণ অনুযায়ী তাই কারো চুল ঘন কারো পাতলা।
এছাড়া আমাদের দেশের আবহাওয়ার বিষয়টি তো আছেই। বাইরের প্রচুর ধুলোবালি চুলের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর।
এজন্য চুলের জন্য দড়কার আলাদা বিশেষ যত্ন।
আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো চুলের যত্নে ২০ টি কার্যকরী টিপস।
যা আপনার চুলের জন্য অনেক বেশি দড়কার।
১.রোদ ও ধুলোবালির সুরক্ষায়ঃ
আপনার চুলকে সবসময় রোদ এবং বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা উচিত। সূর্যের প্রখর রোদ, তাপ, ধুলোবালি ইত্যাদি চুলের জন্য দুর্দশা নিয়ে আসে।
ধীরে ধীরে ধুলোবালি চুলের গোড়ায় জমাট বাঁধতে শুরু করে এবং এর ফলে চুল পড়তে শুরু করে। তাই এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে খোলা আকাশের নিচে রোদে বা বৃষ্টিতে হাঁটার সময় ছাতা বা ক্যাপ পরা উচিত। কাপড় বা ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখলেও চুলকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।
২.সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুনঃ
বাইরে বের হলে চুলে প্রচুর ধুলো-ময়লা জমে। তাই চুলের ধরন বুঝে চুল পরিষ্কার করতে ভালো মানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
শ্যাম্পু করার সময় ভালোভাবে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু করুন। চুল খুব নোংরা হলে দুবার শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে ৩/৪ দিন ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করুন। চুলের যত্নে টিপস টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩.নিয়মিত কন্ডিশনারের ব্যবহারঃ
শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে চুল মসৃন থাকে। ভেঙ্গে যাওয়ার চান্স কমে যায়।
৪.হেয়ার প্রোডাক্টের ব্যবহারঃ
একই কোম্পানির অনুরূপ উপাদান দিয়ে তৈরি চুলের যত্নের পণ্য ব্যবহার করা উচিত। এটি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার চুলের যত্ন নেবে। বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে আপনার চুলে সেটি স্যুট নাও করতে পারে। এতে দেখা যাবে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৫.নরম তোয়ালের ব্যবহারঃ
চুল শুকানোর সময় অবশ্যই নরম তোয়ালের ব্যবহার করা উচিৎ। গোসলের পর এমনিতেই চুল অনেক নরম থাকে এর মধ্যে আপনি শক্ত তোয়ালের ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ নস্ট হতে পারে।
চুলকে অবশ্যই নরম তোয়ালে দিয়ে সফটলি ম্যাসাজ করতে হবে।
৬. ভালো মানের বালিশের কাভার ব্যবহার করুনঃ
বালিশের কাভারের দিকে অবশ্যই নজর রাখা উচিৎ। কিছু বালিশের কাভার আছে যা আপনার চুলকে রুক্ষ করে দিবে। এতে চুলের স্বাস্থ নস্ট হয়। আমরা যখন ঘুমাই আমাদের চুল সারাক্ষন বালিশের কাভারের সাথে লেগে থাকে। অবশ্যই পাতলা এবং নরম কাপড়ের বালিশের কাভার ব্যবহার করা উচিৎ।
৭.অতিরিক্ত হিট দিয়ে চুল শুকাবেন নাঃ
আমরা অনেকেই চুল শুকানোর সময় অনেক তাড়াহুড়া করি। অনেকে হিটের পরিমান বাড়িয়ে দ্রুত চুল শুকানোর চেস্টা করে। এটি চুলের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। এতে চুল ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চুলকে অবশ্যই ধীরে ধীরে শুকাতে হবে।
৮.চুল নিয়মিত ব্রাশ করুনঃ
নিয়মিত চুল ব্রাশ করতে হবে। এটি চুলের জন্য খুবই উপকারী। ব্রাশ করার ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে চুলের বৃদ্ধি হয়।
৯.মাত্রাতিরিক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট পরিহারঃ
অধিক পরিমানে কোনো কিছুই ভালো নয়। চুলের জন্য তাই ভালো মানের কিছু সংখ্যক প্রোডাক্ট ব্যবহার করাই উত্তম। অনেককেই দেখা যায় একের পর এক বিভিন্ন আইটেম চুলে ব্যবহার করে থাকেন। যা চুলের উপকারের চেয়ে ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসে। এ বিষয়ে আমাদের সাবধান থাকা উচিৎ।
১০.ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ওয়াশঃ
গরম পানি সবসময়ই চুলের জন্য ক্ষতিকর। চুলের যত্নে ঠান্ডা পানির বিকল্প নেই। এমনকি শীতের সময় অনেকে চুলে গরম পানি ঢালে। এতে চুলের ড্যামেজ হয়। চুলকে অবশ্যই ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।
১১.শক্ত করে বেণি পরিহারঃ
চুলকে শক্ত করে বাধা যাবে না। আপনার চুল যতো শক্তিশালিই হোক না কেন চুলকে আলতো করে রাখাই উচিৎ। চুলে বেশি প্রেশার দিলে চুলের ড্যামেজ হয়। এ ব্যপারে আমাদের সাবধান থাকা উচিৎ।
১২.ভালো মানের চিরুনীর ব্যবহারঃ
চিরুনীর কাঠিতে গ্যাপ থাকতে হবে। অনেকে অনেক অল্প পরিমান গ্যাপের চিরুনীর ব্যবহার করে থাকেন। এতে চুলের উপর প্রেশার পরে। যার ফলে চুল পরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
১৩.নিয়মিত তেলের ব্যবহারঃ
নিয়মিত ভালো মানের তেল ব্যবহার করতে হবে। তেল মাথা ঠান্ডা রাখে এবং চুলকে নরম রাখে। চুলের রুক্ষতা দূর করতে তেলের জুড়ি নেই।
১৪.হট ওয়েল ম্যাসাজঃ
ভালো ম্যাসাজ চুলের জন্য অনেক উপকারি। বাজারের অনেক ধরণের তেল পাওয়া যায় যেমন অলিভ ওয়েল, আমলা ওয়েল, আমন্ড ওয়েল, ক্যাস্টর ওয়েল। এগুলো এক সাথে মিক্স করেও ভালো একটা ম্যাসাজ নিতে পারেন। যা চুলের জণ্য খুবই উপকারী।
১৫.চুলে হেয়ার প্যাকের ব্যবহারঃ
চুলের ধরণ অনু্যায়ী হেয়ার প্যাক এর ব্যবহার করুন। চুল শুস্ক বা মিশ্র হলে ১০ দিন পর পর চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন এবং চুল তৈলাক্ত হলে ১৫ দিন পরপর হেয়ার প্যাকের ব্যবহার করুন।
১৬.ভেজা চুলে সাবধানে চিরুনির ব্যবহারঃ
ভেজা চুলে চিরুনির ব্যবহার না করাই ভালো। এসময় চুল অনেক নরম থাকে। আর যদি করতেও হয় সেক্ষেত্রে বেশি গ্যাপওয়ালা চিরুনীর ব্যবহার করতে হবে। এবং ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আচড়াতে হবে। চুলের যত্নে টিপস টি খুবই কার্যকরী।
১৭. চুলে টিজিং পরিহার করুনঃ
অনেকে চুলে টিজিং করেন। এতে চুলের আয়তন বৃদ্ধি হলেও তা চুলের জণ্য মোটেও ভালো নয়।
১৮. নিম্নমানের হেয়ার কালার পরিহারঃ
বাজারে অনেক সস্তা ও নিম্নমানের ক্যামিকেল যুক্ত হেয়ার কালার পাওয়া যায়। যা ব্যবহারে চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ বিষয়ে সকলের সতর্ক থাকা উচিৎ।
১৯. নিয়মিত ঘুমঃ
নিয়মিত ঘুম চুল এবং স্বাস্থের জন্য খুবই দরকারি। সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুম হতে হবে রাতে। প্রতি রাতে নূন্যতম ৬-৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিৎ। ঘুম না হলে শরীরে নানা ধরণের অসুখ দেখা দিতে পারে।
২০. স্বাস্থকর খাবারঃ
আপনার স্বাস্থ্য আপনার চুলে প্রতিফলিত হয়। সুস্থ থাকলে চুল ভালো থাকবে। তাই চুল সুন্দর রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
আর তাই চুলের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন, আয়রন এবং প্রোটিনের মতো পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত গ্রহণ করুন। বেশি প্রোটিন চুলকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং প্রচুর পানি পান করে।